সবচেয়ে উন্নত স্মার্টকার্ড বাংলাদেশের, থাকছে যেসব সুবিধা

আগামী সেপ্টেম্বর থেকেই দেশের নাগরিকদের মাঝে স্মার্ট কার্ড বিতরণ করতে যাচ্ছে ইসি। এ লক্ষ্যে ১ কোটি স্মার্ট কার্ড প্রস্তুত করা হয়েছে। বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় ৫০টি দেশে স্মার্টকার্ড বা উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) প্রচলিত রয়েছে। ইউরোপের দেশগুলো ছাড়াও সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াতেও স্মার্টকার্ডের প্রচলন আছে। তবে ইসি দাবি করছে বাংলাদেশের স্মার্টকার্ড পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত।
ইসি সূত্র বলছে, বাংলাদেশের স্মার্টকার্ড পৃথিবীতে সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তিগত সুবিধা সম্পন্ন। প্রায় ৫০টি দেশ স্মার্টকার্ডে গেলেও আমাদের এ প্রযুক্তি কেউ ব্যবহার করেনি। তাই এখন পর্যন্ত আমরাই সবচেয়ে এগিয়ে আছি’।
‘এটি ব্যয়বহুলও। প্রতিটি স্মার্টকার্ড প্রস্তুত করতে দুই ডলার করে খরচ হয়েছে। এ কার্ডের মেয়াদ হবে ১০ বছর। এরপর নাগরিককে নামমাত্র নবায়ন ফি দিয়ে পুনরায় সংগ্রহ করতে হবে।
ঢাকাতেই প্রথম স্মার্টকার্ড দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে দশ আঙ্গুলের ছাপ নেওয়ার মেশিন এবং চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি নেওয়ার মেশিন বিভিন্ন থানা নির্বাচন কার্যালয়ে সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন উপজেলায় এসব মেশিন পাঠানো হয়েছে।
বর্তমানে যে এনআইডি আছে, এতে কেবল চার আঙ্গুলের ছাপ রয়েছে। কিন্তু মানুষের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিংবা ভারি কাজ কোনো হাত দিয়ে দীর্ঘদিন করলে আঙ্গুলের ছাপ পরিবর্তন হয়ে যায়। ফলে কোনো সুনির্দিষ্ট এনআইডির অনুকূলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে শনাক্ত করা জটিল হয়ে পড়ে। তাই দশ আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
এনআইডি অণুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা সিটি-পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে ক্যাম্প করে স্মার্টকার্ড বিতরণ করবো। গ্রামীণ ভোটারদের জন্য ইউনিয়ন পরিষদে ক্যাম্প করা হবে। একটি ইউনিয়নে একাধিক ক্যাম্পও করা হতে পারে। কেউ স্মাটকার্ড নেওয়ার জন্য ক্যাম্পে এলে তাকে প্রথমে দশ আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি দিতে হবে। এরপর তিনি স্মার্টকার্ড নেবেন। তবে তাকে আগের নেওয়া লেমিনেটিং করা জাতীয় পরিচয়পত্রটিও জমা দিতে হবে। আর পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সর্বোচ্চ তিন মিনিট সময় লাগবে’।
যে সুবিধা থাকছে স্মার্ট কাডে:
স্মার্টকার্ড হবে দশ সংখ্যার আগের মত ১৩ কিংবা ১৬ ডিজিটের লম্বা লাইন আর রাখা হচ্ছে না। দেখতে অনেকটা ব্যাংকের এটিএম কার্ডের আদলেই তৈরি করা হচ্ছে এটিকে। স্মাট কার্ডের ১০ সংখ্যার নাম্বারটি ব্যবহার করে দেশের একজন নাগরিকে মৃত্যু পর্যন্ত নাগরিকের সব রকমের সুযোগ-সুবিধা নিতে পারবে।
নতুন এনআইডি কার্ডধারী একজন নাগরিক দেশের মোট ২৫টি কাজে এটি ব্যবহার করতে পারবেন। এর মধ্যে রয়েছে সরকারি সব অনলাইন সুবিধা, ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট, সম্পত্তি কেনাবেচা, টিআইএন প্রাপ্তি, বিয়ে রেজিস্ট্রেশন, ই-পাসপোর্ট, ব্যাংক হিসাব খোলা, ব্যাংক ঋণগ্রহণ , সরকারি ভাতা উত্তোলন, সহায়তা প্রাপ্তি, বিআইএন, শেয়ার-বিও একাউন্ট, ট্রেড লাইসেন্স, যানবাহন রেজিস্ট্রেশন, বীমা স্কিম, ই-গভর্নেন্স, গ্যাস-বিদ্যুত্ সংযোগ, মোবাইল সংযোগ, হেলথ কার্ড, ই ক্যাশ, ব্যাংক লেনদেন ও শিক্ষার্থীদের ভর্তির কাজ ছাড়াও আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় কাজ।
প্রসঙ্গত,দেশে বর্তমানে প্রায় ১০ কোটি ভোটার রয়েছেন। তাদের মধ্যে প্রায় ৯ কোটি ভোটারের লেমিনেটিং করা জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে।

ইসি’র পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রথমে রাজধানী, এরপর সিটি, জেলা-উপজেলা, পৌরসভা এবং সবশেষে ইউনিয়ন পর্যায়ে স্মার্টকার্ড বিতরণ করা হবে। সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে ঢাকায় স্মার্টকার্ড বিতরণের পর অন্য সিটিতেও তা বিতরণ করা হবে। এরপর আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে গ্রামের ভোটাররাও পাবেন উন্নতমানের এই কার্ড।
সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ডের ভোটার সংখ্যা ভেদে একাধিক ক্যাম্প করা হবে। পৌরসভার প্রতি ওয়ার্ডে থাকবে একটি করে ক্যাম্প। আর গ্রামের ভোটারদের ইউনিয়ন পরিষদে ক্যাম্প করে স্মার্টকার্ড বিতরণ করা হবে।

You Might Also Like

0 মন্তব্য(গুলি)

add